একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল পাঠদান বা পরীক্ষার সীমানায় আবদ্ধ নয়। এর পরিধি আরও বিস্তৃত—এটি গড়ে তোলে মনন, সৃষ্টি করে মূল্যবোধের ভিত্তি, আর সংযোগ ঘটায় প্রজন্মের সঙ্গে প্রজন্মের। উত্তর চট্টগ্রামের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী আবুতোরাব ফাজিল (স্নাতক) মাদ্রাসা এবারের আয়োজনে সেটাই আরও একবার প্রমাণ করল।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) মাদ্রাসার প্রাঙ্গণ এক অনন্য পরিবেশের জন্ম দেয়। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে কেরাত, গজল, হামদ ও নাতের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। এই আয়োজন যেন কেবল শিক্ষার্থীদের প্রতিভার প্রকাশ ছিল না; বরং এটি ছিল তাদের আত্মার পরিচ্ছন্নতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
সন্ধ্যা গড়িয়ে বিকালে যখন সম্মাননার পালা আসে, তখন যেন এক নতুন আবেগের সৃষ্টি হয়। শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ—বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিদের সংবর্ধিত করা হয়। এটি শুধু কৃতজ্ঞতার প্রকাশ নয়, বরং একটি মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ—যেখানে শেখানো হয়, যোগ্যদের সম্মান জানানোও শিক্ষার একটি অপরিহার্য অংশ। দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়, যা ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
এরপর আসে মাহফিলের মাহেন্দ্রক্ষণ। শত শত মানুষের সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণ। অধ্যাপক ড. বিএম মফিজুর রহমান আল আজহারি, শায়খুল হাদিস হযরত মাওলানা হারুন আল মাদানীসহ বিশিষ্ট বক্তারা ইসলামের আলোকে জীবন গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাদের কথায় শিক্ষার্থীরা যেমন নতুন দিকনির্দেশনা পায়, তেমনি স্থানীয় মানুষও নিজেদের আত্মিক জগৎকে আরও সংহত করার অনুপ্রেরণা খুঁজে পায়।
আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার এই আয়োজন ছিল কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়; এটি ছিল শিক্ষা, সম্মান ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য সমন্বয়। এই প্রতিষ্ঠান তার শতবর্ষী ঐতিহ্যকে যেভাবে ধারণ করে চলেছে, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।