শিশুদের স্বপ্ন, আনন্দ ও নৈতিকতার বার্তা ছড়াল অনুষ্ঠানজুড়ে

সপ্তম শ্রেণির সাদিয়া মাইক্রোফোন হাতে বলল, ‘আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে চাই’। দ্বিতীয় শ্রেণির মালিহা বোর্ডে লিখে জানান দিচ্ছে ‘আমি বড় হয়ে ওদের মতো পড়াতে চাই!’ এ স্বপ্নের কথা সাধারণ কোন শিক্ষার্থীর মুখে নয়! চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চারুলতা পরিচালিত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অবৈতনিক বিদ্যাপীঠ চারুলতা বিদ্যাপীঠে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে শিশুদের কণ্ঠে এভাবে উঠে এসেছে সাহসী স্বপ্নের গল্প। সকাল সাড়ে ৯টায়  এক বর্ণ্যাঢ্য র্যালির মধ্য দিয়ে আয়োজন শুরু হয়। জাতীয় সংগীত ও শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর শিশুদের পরিবেশনায় গাওয়া সেই উদ্বোধনী গান ‘আমরা করবো জয়”।

শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সাজ সাজ রবে অংশ নেয় নানা আয়োজনে।

চারুলতা বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার ও ময়না আক্তারের যৌথ সঞ্চালনায় শিশুরা অনুষ্ঠানে  নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। মেতে উঠেছিল মজার মজার খেলায়।

শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে— ‘আমি বড় হয়ে আইনজীবী হবো, সংবাদিক হবো’। সেই চিঠিগুলো আজ জমা হলো বিদ্যালয়ের স্বপ্নঘরে, যা একদিন তুলে ধরা হবে বড় হয়ে ওঠা সেই সাদিয়া, মালিহাদের সামনে।

‘আমার স্কুল, আমার স্মৃতি’ বিভাগে হেসে হেসে এক শিশু বলল, ‘স্যার একদিন আমাকে না বলে চকলেট দিয়ে দিলেন, শুধু ভালো করে পড়ার জন্য!’— সেই চকলেটের স্বাদ যেন ছিল স্নেহ, ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণার।

মজার খেলা, নিরব সংকেত, শব্দ খেলা, গল্প বলার প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি— সব মিলিয়ে পুরো চারুলতা আজ প্রাণে ভরে উঠেছিল।

শিক্ষকদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে এক শিশু লিখেছে— ‘আপনাদের চোখেই প্রথম দেখেছিলাম, আমি পারবো।’ পরে কেক কেটে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব নাট্য পরিবেশনা— ‘শৃঙ্খলা’র মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

উল্লেখ্য, একটি ছোট্ট ঘর, কিছু জীর্ণ বেঞ্চ, হাতে গোনা কয়েকটি বই আর একদল স্বপ্নবাজ তরুণ। ২০১২ সালের এক নিরালায় যাত্রা শুরু করেছিল “চারুলতা বিদ্যাপীঠ”—একটি স্কুল, যা কেবল পাঠশালা নয়, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ছিল আশ্রয়, স্বপ্ন ও ভালোবাসার ঘর।

২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘চারুলতা’ সমাজের অসহায় শিশুদের জন্য একটি শিক্ষার ঠিকানা গড়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নেয় এক বছর পর। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় গড়ে ওঠে চারুলতা বিদ্যাপীঠ— যেখানে নেই কোনো বেতন, নেই আড়ম্বর, আছে কেবল স্বেচ্ছাশ্রম, নিরন্তর ভালোবাসা আর প্রতিশ্রুতি।

সর্বশেষ