পবিত্র রমজান মাস ঘিরে চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে এখন আনারসের রসালো গন্ধ আর ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত। ইফতার আয়োজনে আনারসের চাহিদা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ফলের দোকানগুলোতে দেখা মিলছে বাহারি জাতের আনারস — কেউ কিনছেন কাঁচা আনারস জুস তৈরির জন্য, আবার কেউ কিনছেন টুকরো করে ইফতারে পরিবেশনের জন্য।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালি, রেয়াজউদ্দিন বাজার, এবং চাক্তাইয়ের বাজারে সকাল থেকেই বিক্রেতারা সাজিয়ে রাখছেন পাকা ও আধাপাকা আনারস। চাহিদা বেশি থাকায় অনেক বিক্রেতাকে ভ্যানগাড়িতেও বিভিন্ন জাতের আনারস বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতাদের মতে, ইফতারে আনারসের সুমিষ্ট স্বাদ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক বেশি।
ফল বিক্রেতা আবদুল হালিম জানান, “রমজানে আনারসের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ইফতারিতে ঠান্ডা কিছু খেতে মানুষ আনারস জুস বানায়, আবার সালাদের সঙ্গেও খায়।” তিনি আরও বলেন, “এই সময়টায় প্রতিদিনই আনারস কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তারা আনারসকেই প্রাধান্য দেন।”
ক্রেতা সুমাইয়া আক্তার বললেন, “ইফতারের সময় ঠান্ডা ও রসালো ফল খেতে ইচ্ছে করে। আনারস সেদিক থেকে সেরা পছন্দ, কারণ এটি যেমন সুমিষ্ট, তেমনই তৃষ্ণা মেটায়।” তাঁর মতে, পরিবারের ছোট-বড় সবার জন্য ইফতারে আনারস রাখা স্বাস্থ্যকর অভ্যাস।
আনারস শুধু সুস্বাদুই নয়, এর রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। এতে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্রোমেলিন এনজাইম রয়েছে, যা হজমে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। আনারস পানিশূন্যতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে, ফলে দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে এটি বিশেষভাবে উপকারী।
চট্টগ্রামের আনারসের বাজারে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও ক্রেতাদের উৎসাহে কমতি নেই। একেকটি মাঝারি আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, আর বড় সাইজের আনারস ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। তবে রমজানের মাঝামাঝি সময়ে চাহিদা আরও বাড়ার কারণে দাম কিছুটা বাড়তে পারে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
ফল ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, পুরো রমজান মাস জুড়েই আনারসের বাজার এমনই জমজমাট থাকবে। তারা বলছেন, ইফতার আয়োজনে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, যা বাজারকে আরও চাঙা করে তুলছে। বিক্রেতারা আরও জানালেন, আনারসের পাশাপাশি অন্যান্য মৌসুমি ফল যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, এবং আঙ্গুরের চাহিদাও বেড়েছে, তবে আনারসের প্রতি ক্রেতাদের বিশেষ আকর্ষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আনারসের এতো চাহিদার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এর সহজলভ্যতা ও বহুমুখী ব্যবহার। এটি জুস, সালাদ, ফ্রুট চার্ট কিংবা শুধু কাঁচা খাওয়ার জন্যও বেশ উপযোগী। ইফতারে ঠান্ডা পানীয় তৈরির উপাদান হিসেবে আনারসের জনপ্রিয়তা দিন দিন আরও বাড়ছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান মাসে ইফতারের সময় শরীরকে সতেজ ও হাইড্রেটেড রাখতে ফলের গুরুত্ব অনেক। তাই আনারসের মতো পুষ্টিকর ও রসালো ফলের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে তাদের আশা।