চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ১২৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মামলাটি করেছেন মো. ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তি, যার দাবি—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের ৪ আগস্ট, যখন নগরের বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতুর কাছে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছিল। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান এবং সেখানে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বাদীর দাবি, সেদিন হামলাকারীরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করলে প্রতিহত করতে গিয়ে তার ডান হাতের কবজির রগ কেটে যায়। হামলার পর আতঙ্কে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে না গিয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এই মামলায় শুধু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার নাম রয়েছে। রাজনীতির ময়দানে এটি এক নতুন মোড় তৈরি করেছে, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ বিরল।
বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন জানিয়েছেন, মামলার আবেদন আদালতে দাখিলের পর তা তদন্ত করে গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি দাখিলের পর থেকেই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বলে দাবি করলেও, বাদীপক্ষ বলছে এটি ন্যায়বিচারের লড়াই। অন্যদিকে, বিরোধী পক্ষের দাবি, সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছিল, যা এখন আদালতের নির্দেশে প্রকাশ্যে এসেছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণও বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। কেউ বলছেন, এটি দীর্ঘদিনের একটি রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন, আবার কেউ মনে করছেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে এটি এক নতুন চ্যালেঞ্জ। এখন দেখার বিষয়, এই মামলার তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয় এবং এর প্রভাব চট্টগ্রামের রাজনীতিতে কতটা গভীর হয়।