রমজানে প্রচলিত কিছু ভুল: আত্মশুদ্ধির মাস যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা না হয়

রমজান মাস হল আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের এক মহাসুযোগ। মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাসে মুসলমানরা নিজেদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ আল্লাহমুখী হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, অনেক মানুষ এই পবিত্র মাসের প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে না পেরে কিছু প্রচলিত ভুল ও গাফিলতিতে লিপ্ত হন, যা রমজানের পবিত্রতা ও মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করে।

রমজানে প্রচলিত কিছু বড় ভুল: রমজানকে শুধুমাত্র একটি সামাজিক উৎসব হিসেবে পালন করাঅনেকেই রমজানকে কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা বা সামাজিক উৎসব হিসেবে দেখেন। অথচ এটি আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। রোজা রাখা মানেই শুধু না খেয়ে থাকা নয়, বরং চিন্তা, আচরণ ও মনকে পবিত্র রাখা এবং আল্লাহর ইবাদতে সময় ব্যয় করাই এর মূল শিক্ষা। ইফতার বিলম্বে করাকেউ কেউ অতিরিক্ত সতর্কতার নামে ইফতার দেরিতে করেন, যা সুন্নাহবিরুদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেছেন, “মানুষ ততদিন কল্যাণে থাকবে, যতদিন তারা ইফতার তরান্বিত করবে।” (সহিহ বোখারি ও মুসলিম) রোজা রাখলেও নামাজে অবহেলা করারমজানে রোজা পালন করলেও অনেকেই নামাজের প্রতি উদাসীন থাকেন, যা মারাত্মক ভুল। রাসূল (সা.) বলেছেন, “নামাজই ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণকারী।” (সহিহ মুসলিম) রাত জেগে সময় নষ্ট করা এবং দিনে অলস থাকারাতভর বিনোদন বা অনর্থক কাজে লিপ্ত থেকে দিনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও নামাজ ত্যাগ করা রমজানের মূল শিক্ষার পরিপন্থী। এতে সেহরি, ফজর, ও অন্যান্য ইবাদতেও ব্যাঘাত ঘটে। খাদ্য গ্রহণে অপচয় ও অতিরিক্ততারমজান সংযমের মাস, অথচ অনেকের কাছে এটি খাবারের প্রতিযোগিতার সময় হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ অলসতা তৈরি করে এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়। শুধু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বা ওজন কমানোর জন্য রোজা রাখাঅনেকেই রোজাকে শুধুমাত্র ডায়েটের অংশ হিসেবে দেখেন, যা সঠিক নয়। রোজার মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। মিথ্যা, গীবত ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ না করারাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ ত্যাগ করে না, তার খাওয়াদাওয়া বর্জন করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (সহিহ বোখারি)

 রোগী ও মুসাফিরদের জন্য ইসলামের সহজ বিধান মেনে না চলাশারীরিকভাবে অসুস্থ বা ভ্রমণে থাকলে ইসলাম রোজা ভঙ্গের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু অনেকেই অযথা কষ্ট করেন বা রোজা না রাখাকে ভুল মনে করেন।

পরীক্ষা বা কাজের অজুহাতে রোজা না রাখাপরীক্ষা বা কর্মব্যস্ততাকে অজুহাত দেখিয়ে রোজা না রাখা ইসলামী শিক্ষা বিরোধী। আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তাঁর জন্য তিনিই যথেষ্ট।” (সূরা আত-তালাক: ৩) তারাবির নামাজে অনীহাঅনেকে শুধু ইফতার ও সেহরিতে গুরুত্ব দিলেও তারাবির নামাজের প্রতি মনোযোগী হন না, যা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

রমজানের শেষ দশককে ঈদের কেনাকাটায় নষ্ট করাশেষ দশক ইবাদতের জন্য সর্বোত্তম সময়, কিন্তু অনেকেই এ সময় শপিং ও দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত থাকেন, যা বড় বঞ্চনার কারণ।

কীভাবে রমজানকে সর্বোচ্চ ফজিলতের মাসে পরিণত করা যায়? রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর ইবাদতে কাটানো ইফতার ও সেহরিতে অপচয় এড়িয়ে সংযমী হওয়া নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা গীবত, মিথ্যা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা দান-সদকা করা ও দরিদ্রদের সাহায্য করা তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজে গুরুত্ব দেওয়া শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে মশগুল থাকা

রমজানের প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে হলে শুধুমাত্র বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে আত্মশুদ্ধি, ইবাদত ও সংযমের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের সঠিক আদব ও ফজিলত বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।