রাঙ্গুনিয়ায় ঈদ উৎসবের রঙিন সন্ধ্যা

ঈদের কিছুদিন পরের সন্ধ্যা। আকাশে তখনো ঈদের চাঁদের রেশ। শহুরে কোলাহল থেকে খানিক দূরে, পাহাড়ঘেরা রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দবাড়ি বিসিসিউএল সমবায় মার্কেট চত্বর যেন পরিণত হয়েছিল এক টুকরো সংস্কৃতির আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে। নাচ-গান, আবৃত্তি আর হাসিমুখে মিশে যাওয়া শত মানুষের পদচারণায় শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতটা হয়ে উঠেছিল ভিন্নরকম।

‘স্বজন সমাবেশ’ ও ‘রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাব’র যৌথ আয়োজনে এই ঈদ পুনর্মিলনী যেন ছিল রাঙ্গুনিয়ার সংস্কৃতিমনা মানুষের প্রাণের উৎসব। এই মিলনমেলা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, এটি ছিল এক মানবিক-সাংস্কৃতিক বার্তার বহিঃপ্রকাশ যেখানে শিল্প, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা এক মোহনায় এসে মিলেছে।

ঈদের পরপরই এমন আয়োজন—যেখানে স্থানীয় প্রতিভার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরাও। কণ্ঠে ছিল আবেগ, ছন্দে ছিল উচ্ছ্বাস, চোখে ছিল ভালোবাসা।

বেতার শিল্পী ফুলকি বড়ুয়ার কণ্ঠে গাওয়া গান, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অপ্সরী বড়ুয়া ফ্লোরার পরিবেশনা, এবং উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী সমৃদ্ধি হালদার স্নেহা, দীপ্তাক্ষী শর্মা কৌশিকী, মো. খুদরাত নীল-এর মন ছুঁয়ে যাওয়া গানে দর্শকেরা হারিয়ে যান আনন্দের জগতে।

নৃত্য পরিবেশন করেন সৃজনা বড়ুয়া, আবৃত্তি করেন জান্নাতুল তামান্না, আফতাবী হোসাইন মুসকান, নাজাত হোসাইন মেহরিন— যাদের অনবদ্য উপস্থাপনায় প্রাণ পায় বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি।

অনুষ্ঠানের যন্ত্রসংগীতায়োজনে ছিলেন ঝুলন দত্ত, দুর্জয় দাশ, মান্না বড়ুয়া, শিবলু, অভিজিত দাশ কিশানসহ একদল মেধাবী যন্ত্রশিল্পী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নুরুল আমিন। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ মোরশেদ। সভাপতিত্ব করেন রাঙ্গুনিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. ইলিয়াছ তালুকদার। সঞ্চালনায় ছিলেন শিক্ষক সুবর্ণা বড়ুয়া ও সংবাদকর্মী আব্বাস হোসাইন আফতাব।

বক্তব্য রাখেন সমাজসেবক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ নানা পেশার প্রতিনিধি। তাঁরা সবাই এই আয়োজনকে ‘রাঙ্গুনিয়ার সংস্কৃতিচর্চার জীবন্ত প্রমাণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই ঈদ পুনর্মিলনী ছিল কেবল একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নয়, বরং এটি ছিল এক আন্তরিক বার্তা— ‘ঈদের আনন্দ সবার জন্য’। আয়োজনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, রাঙ্গুনিয়ায় সংস্কৃতির শিকড় এখনো গভীরে, এবং তরুণ প্রজন্মও সেই ঐতিহ্য ধারণে আগ্রহী।

আয়োজনে প্রাণ দিয়েছে স্বজন সমাবেশের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক, সংগঠক ও সদস্য। আহ্বায়ক ছিলেন রানা বড়ুয়া, সদস্য সচিব সেতুল মির্জা। উপস্থিত ছিলেন স্বজন সমাবেশ রাঙ্গুনিয়ার সভাপতি সনজীব সুশীল, সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আবছার চৌধুরী, সহ-সভাপতি শিক্ষক মো. শাহ আলম, যুগ্ম সম্পাদক মো. ইদ্রিস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রানা বড়ুয়া, প্রচার সম্পাদক তাহসান খান ইমন, অর্থ সম্পাদক মোরশেদুর রহমান প্রমুখ।

সাংবাদিকতা, সমাজসেবা ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বে ছিলেন কবির হোসেন, কাজী মোশাররফ, শান্তি রঞ্জন চাকমা, আকাশ আহমেদ, আইয়ুব চৌধুরী, হাবীবুল্লাহ মিসবাহ্, জাহেদ হাছান তালুকদার, সানজিদা লিজা, নেজামুল হক সায়েম, মুক্তি সাধন বড়ুয়া, অর্পণ বড়ুয়া, সৌরভ সাহা, সৌমিত্র প্রসাদ পিন্টু সহ আরও অনেকে।

আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিল পাক্ষিক চলমান রাঙ্গুনিয়া। তাঁদের উপস্থিতি ও প্রচারে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য ও গুরুত্ব আরও বিস্তৃত হয়ে পৌঁছায় বৃহত্তর দর্শক ও পাঠকের কাছে।

ঈদ মানে শুধু খুশি বা আত্মীয়ের সঙ্গে মিলন নয়, ঈদ হতে পারে সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ, ভালোবাসার বিনিময় আর মনের মিলনের এক পরিপূর্ণ উপলক্ষ। রাঙ্গুনিয়ার ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সেই সত্যকেই আবার প্রমাণ করে দিলো। এই আয়োজন শুধু একটি রাতের স্মৃতি হয়ে থাকছে না, বরং হয়ে থাকছে রাঙ্গুনিয়ার সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম মাইলফলক।

সর্বশেষ