চট্টগ্রামের বাঁশখালী ছনুয়া ইউপিস্থ খুদুকখালী হোসাইনী দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি নামে মাদ্রাসা থেকে অন্তত ৩৫-৪০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত বৈলছড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও উপজেলা জামায়াতের আমীর জনৈক আব্দুর রহিম ছানবীকে সভাপতি করে গোপনে এডহক কমিটি ঘোষণা করায় পুরো এলাকাজুড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, নবগঠিত এই এডহক কমিটি বাতিল ঘোষণা করতে এবং মাদ্রাসার সহ-সুপার জাহাঙ্গীর আলমের অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপন করে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর ১টিসহ অন্তত ৭টি দপ্তরে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সুপার এবং ছাত্র -ছাত্রীদের অভিভাবক ও এলাকায় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ ও অভিযোগকারী সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সন থেকে পাঠ্যকার্যক্রম শুরু হওয়া খুদুকখালী হোসাইনী মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সুপার আলহাজ্ব মাওলানা আমান উল্লাহর হাত ধরে ক্রমাগত ভাবে মাদ্রাসাটি এমপিও ভুক্ত করা হয়, এবং ১৯৯১ সনে প্রলয়নকারী ঘুর্ণিঝড়ের আগ্রাসনে মাদ্রাসাটির অবকাঠামো অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার পর ক্লান্তিকর পরিস্থিতি থেকে প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আমান উল্লাহ পুনরায় গড়ে তোলেন এই মাদ্রাসাটি।
তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠাতার নিরলস প্রচেষ্টায় উক্ত মাদ্রাসায় ২টি ভবন, বিশাল মাঠের দুইদিকে পাকা ওয়াল নির্মাণ, পুকুর খনন, জামে মসজিদসহ অবকাঠামো উন্নয়ন ও পড়া-লেখার সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে অত্যান্ত সুচারুরূপে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল, এতে প্রতিবছর এই মাদ্রাসার ছাত্র -ছাত্রীরা পরীক্ষার্থীয় অংশ গ্রহণ করে ভালো ফলাফল অর্জন করে সুনাম বয়ে আনেন শিক্ষার্থীরা। আর মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সরকারি ও প্রতিষ্ঠানিক নিয়মানুযায়ী পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই মাদ্রাসার কমিটি ও মাদ্রাসাটি পরিবেশ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ছিলো।
মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা মাওলানা আমান উল্লাহ দীর্ঘদিন যাবৎ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, পরে তিনি ২০২০ সালে এই দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার পর বিগত ২০২২ সালে এডহক কমিটির সভাপতি এবং পরবর্তীতে পরিচালনা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে অদ্যবধি পর্যন্ত মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত রয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা সুপার মাওলানা আমান উল্লাহ, তাঁর অবসর পরবর্তীতে থেকে মাদ্রাসা সহ-সুপার মাওলানা ফয়জুল্লাহ (বর্তমান) ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরই মধ্যে উক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার ফয়জুল্লাহ সাহেব শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত ভাবে মাদ্রাসায় আসতে না পারাতে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনৈক জাহাঙ্গীর আলম নামে এক শিক্ষক নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সুপার পরিচয় দিয়ে মাদ্রাসা ক্লাস ফাঁকি দেয়া, পরীক্ষা ফি, ভর্তি ফি, ফরম পুরণ ও মাসিক বেতন বাবত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করা, উক্ত টাকার কোনো ধরনের রশিদ ছাত্র -ছাত্রীদেরকে প্রদান না করা এবং আদায়কৃত টাকা মাদ্রাসার ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা নিজে আত্মসাৎ করা, অফিস ও মাদ্রাসার বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ইচ্ছেমতো বাউচার বানিয়ে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাৎ করা, মাদ্রাসায় ছাত্র -ছাত্রীদেরকে পাঠদান না করা এবং মাদ্রাসায় উপস্থিত না থেকে অফিসিয়াল কাজের অযুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকা এবং ১০-১৫ দিন পর পর অফিসে এসে শিক্ষক হাজিরা খাতায় সব স্বাক্ষর এক সাথে করে দেয়াসহ শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের কথা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওকে কমিটির সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়ে জনৈক জাহাঙ্গীর আলমের খুঁটির জোরকে টিকিয়ে রাখতে তার সহযোগীদের নিয়ে এরইমধ্যে বৈলছড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুর রহিম ছানবীকে সভাপতি করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবর গোপনে এডহক কমিটির প্রস্তাবনা পাঠানোর খবর ছড়িয়ে পড়ায় পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রস্তাবনায় সভাপতির মনোনয়ন পেতে যার নাম উল্লেখ লিপি করা হয়েছে তিনি, একজন অন্য প্রতিষ্ঠানের সহকারীর শিক্ষক, বর্তমানে তিনি পরিবার নিয়ে অত্র মাদ্রাসা থেকে অন্তত ৩০ কিঃ মিঃ দূরে পৌরসভা এলাকায় বসবাস করেন, বাস্তব তথ্যকে গোপন করে এডহক কমিটিতে তাকে সভাপতি লিপি করে ওই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ১৯৮৪ সাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই মাদ্রাসার কোনো ধরনের উন্নয়ন কাজে এই এডহক কমিটির সভাপতি পদে আসা ব্যক্তি এই মাদ্রাসায় কোনো ধরনের সামন্যতম সহযোগীতা প্রদান করেননি, এমনকি তিনি বর্তমানে এই মাদ্রাসা থেকে অন্তত ৩০-৩৫ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থান করেন এবং যার প্রেক্ষিতে নবগঠিত এডহক কমিটি বাতিল চেয়ে, পুনরায় নতুন ভাবে এডহক কমিটির গঠণের অনুমোদনের দাবি জানিয়ে এবং জনৈক জাহাঙ্গীর আলম নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অনিয়ম -আত্মসাতের অভিযোগ এনে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ঢাকা বরাবর, পরিচালক ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর ঢাকা, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম, জেলা শিক্ষা অফিসার চট্টগ্রাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাঁশখালী, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাঁশখালীসহ অন্তত ৭টি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে অভিযোগকারী।
এবিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদুল আলম বলেন, এধরণের অভিযোগ এখনও পর্যন্ত আমার হাতে আসেনি, আসলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।