জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরিত হবে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘চট্টগ্রামের জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর হিসাবে গড়ে তুলবে সরকার। জিয়া স্মৃতি জাদুঘর ১৬ বছর বন্ধ ছিল। দায়িত্ব নেওয়ার পর জাদুঘরের যে বাজেট ছিল তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। যেহেতু জিয়া জাদুঘর, তাই এ জাদুঘরে জিয়াউর রহমানের পুরো জীবনের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে।’

সোমবার (১৯ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলন সংস্কৃতি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এসময় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর নিয়ে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমরা জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। এটা গত ১৫-১৬ বছর অলমোস্ট ইনঅ্যাক্টিভ ছিল। এটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনেই একটা প্রতিষ্ঠান। ফলে এটা আমার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ জন্য মাস তিনেক আগে এটা নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে একটা সভা করেছি। সেই মিটিংয়ে প্রথম কাজটা আমরা করেছি-এটার যে বরাদ্দ ছিল সেটা আমরা দ্বিগুণ করেছি। এবার এখানে এসে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের পর আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, শুধু বরাদ্দ বাড়ানোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটাকে একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়ামে রূপান্তর করা।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সেটা করার জন্য দরকার হচ্ছে প্রপার কিউরেটর, যারা বিষয়গুলো জানবেন। এটা শুধু চট্টগ্রামের বিষয় নয়, জিয়াউর রহমানের পূর্ণাঙ্গ জীবন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে শুরু করে উনার পূর্ণাঙ্গ জীবনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় উনি কী কী সিগনিফিকেন্ট কাজ করেছেন, সবগুলো জিনিস যেন আসে। এই জিনিগুলো কীভাবে প্রপারলি অডিয়েন্সের কাছে রিপ্রেজেন্ট করা যায়, এজন্য একটা কিউরেটর টিম লাগবে, সেই টিমটা আমরা তৈরি করছি।’

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি গবেষণা টিমও তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘পাশাপাশি কিউরেটর টিমকে হেল্প করার জন্য একটা রিচার্স টিম প্রয়োজন, যারা জিয়াউর রহমানের ওপর রিচার্স করে জানাবে কী কী হাইলাইট হবে এবং পয়েন্টগুলো কী কী। এটা আশা করি আমরা আগামী মাসখানেকের মধ্যে করতে পারব। তারপর আমরা মিউজিয়ামের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু করব। কতদিন লাগবে সেটা আমি এই মুহূর্তে প্রেডিক্ট করতে পারছি না, তবে কাজটা আমরা হাতে নিয়েছি এবং কাজটা আমরা শুরু করছি।’

দেশের সংস্কৃতি খাতে এত জঞ্জাল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বল্প সময়ে দূর করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল আগ্রহ, শুধু সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় না, সকল মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ, মানে আমাদের উন্নয়নের দর্শনই হচ্ছে- দালান বানাও, দালান বানাও, দালান বানাও। দালানের ভেতরে কী হবে, এটার কোনো খবর নেই। শিল্পকলা একাডেমি দেশের বহু জায়গায় ৬০০-৭০০ সিটের অডিটোরিয়াম বানিয়েছে, যেখানে ৫০ জন লোকও যায় না, মাসে পাঁচ-ছয়বারও ব্যবহার হয় না।’

শিল্পকলার পাঠ্যসূচি নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের শিল্পকলাগুলো কবে একটা কী কারিকুলাম বানিয়ে দিয়ে গেছে, ওই কারিকুলামের মধ্যেই আমরা আটকে আছি। বাংলাদেশে সবচেয়ে পাওয়ারফুল হচ্ছে মিউজিক, গান। একেক অঞ্চলে গানের একেকরকম ভ্যারাইটি। আমাদের যে অ্যাসেট আছে, সেটাকে আমরা নিজেরাও ব্যবহার করিনি, বাইরের দুনিয়ায়ও প্রদর্শন করিনি। চট্টগ্রামে মোস্ট পাওয়ারফুল হচ্ছে রক মিউজিক। বাংলাদেশের রক মিউজিক কিংবা যেটাকে আমরা ব্যান্ডসঙ্গীত বলি, এটাতে সবচেয়ে বড় অবদান চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানদের। কিন্তু চট্টগ্রামের শিল্পকলার সঙ্গে রক মিউজিকের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন চট্টগ্রামের রক মিউজিশিয়ানরা শিল্পকলাকে তার আখড়া ভাবতে পারল না, এটা শিল্পকলার ব্যর্থতা, আমাদের ব্যর্থতা।’

চট্টগ্রামের জব্বার মিয়ার বলী খেলা একটি শতবর্ষী আয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বহন করে। আগামী বছর থেকে জব্বারের বলী খেলা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। জব্বারের বলি খেলা ও নৌকা বাইচও যুক্ত হবে ক্যালেন্ডারে। ’ তিনি পহেলা বৈশাখেও নৌকা বাইচের আয়োজন করার আহ্ববান জানান।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে আবারও ‘নতুন কুঁড়ি’ অনুষ্ঠান চালুর বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, ‘নতুন কুঁড়ি চালুর বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মাহফুজ আলম রাজি। নতুন কুঁড়িটা অবশ্যই চালু করতে হবে। নতুন কুঁড়ি এমন এক ক্রেজ তৈরি করেছিল যে, সেখানে যাওয়ার জন্য এক বছর কিংবা দুই বছর, তিন বছর আগে থেকে বাসায় টিচার রেখে বাচ্চাকে গান শেখানো শুরু করে দিত। তো, এই জায়গাটাতে যদি আমরা ফেরত না যাই, তাহলে বাচ্চাদের জন্য এটা খুব মুশকিলের জায়গা হবে।’

এর আগে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, মুসলিম ইনস্টিটিউট, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর পরিদর্শন করেন।