১৩ বছর পরেও সাগর-রুনি হত্যা রহস্যই রয়ে গেল

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডের মামলার কিনারা হয়নি এই দীর্ঘ সময়েও।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। আশা জাগে, এবার এই চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে। তবে এই সরকারের ছয় মাসেও সে আশা পূরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই। তা এখনও রহস্যের বৃত্তেই থেকে গেছে।

সবশেষ এই হত্যার রহস্য উদঘাটনে মামলার তদন্তে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারাও তিন মাস পার করেছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। এ হত্যা মামলা প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। ডিবি ব্যর্থ হলে দায়িত্ব দেওয়া হয় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-র‌্যাবকে। র‌্যাব এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আদালত থেকে সময় নিয়েছে শতাধিক বার।

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর মামলার তদন্তভার গেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিআইবি)।

পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক বলেছেন, ‘গ্রেপ্তার বহিষ্কৃত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সাগর-রুনি হত্যা মামলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিয়াউল আহসানকে নিয়ে অনেক আলোচনা ছিল। এসব বিষয়ে জিয়াউল আহসানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি কিছু জানেন কি না তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তদন্ত নিয়ে তার কোনো বক্তব্য আছে কি না- সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।’

পিবিআই সূত্র জানায়, টাস্কফোর্সের সদস্যরা সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। সেখানে জেলগেটে জিয়াউল আহসানকে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে এই মামলায় ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে পিবিআই কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে প্রধান করা হয়েছে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) মোস্তফা কামালকে। কমিটির সদস্য করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি রেবেকা সুলাতানা, রুমানা আক্তার, নাসমুল হাসান ও মো. জাহাঙ্গীর আলমকে।

এই মামলায় ইতোপূর্বে আটজনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করেছিলো তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তাদের মধ্যে তানভীর ও পলাশ রুদ্র পাল নামের দুজন জামিনে আছেন।

বিচারপ্রাপ্তির অপেক্ষা
সাগর-রুনি হত্যার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তারে প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। সাংবাদিক সংগঠনগুলোও বিচার দাবি করে আসছে। মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত সমাধান কামনা করছেন সাংবাদিকরা। নৃসংসভাবে খুন হওয়া দুই সাংবাদিক পরিবারের সদস্যরা বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় আছেস।

ইতোমধ্যে মেয়ের হত্যার বিচারের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মারা গেছেন রুনির মা। সাগর সরওয়ার ও রুনি দম্পতির একমাত্র সন্তান সেদিনের শিশু মেঘও বড় হয়ে গেছে। বাবা-মা হত্যার বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে অপেক্ষায় একমাত্র সেও।